Friday 30 March 2012

অ্যালেন গিন্সবার্গ : 58Th pOst

বাস্তব সিংহ
বাড়ি ফিরে শোবার ঘরে দেখি একটা সিংহ
সিংহ ! সিংহ ! চ্যাঁচাতে চ্যাঁচাতে ভেনটিলেটর দিয়ে বেরিয়ে আসি
দুজন স্টেনোগ্রাফার কালো চুল এলিয়ে দড়াম শব্দে জানালা বন্ধ করে
আমি তাড়াতাড়ি প্যাটারসনে বাড়ি ফিরে দু'দিন কাটাই

আমার পুরনো জার্মান ডাক্তারকে ডেকে পাঠাই
মারিহুয়ানা টানার জন্য সে আমায় চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে 
          লাথিয়ে বের করে দ্যায়
'বিশ্বাস করুন' আমি হাঁপাই 'আমার ঘরে একটা সিংহ ঢুকেছে'
'কোনো আলোচনায় লাভ হবে না' বললেন উনি

আমি বহু দিনের বন্ধুর বাড়ি গিয়ে তার বান্ধবীর সঙ্গে মদ খেলুম
আমি তাকে চুমু খেয়ে ঘোষণা করলুম আমার একটা সিংহ রয়েছে
          চোখে আমার উন্মাদ রশ্মি
শেষকালে মেঝেতে ধস্তাধস্তি আরম্ভ করলুম আমরা কামড়ে দিলুম
          ওর ভুরু আর সে আমায় লাথিয়ে বের করে দিল
রাস্তায় দাঁড়-করানো তার জিপগাড়িতে আত্মমৈথুন করে আমি
          কাতরে উঠলুম 'সিংহ'।

আমার লেখক বন্ধু জো-কে দেখতে পেয়ে গর্জন করে উঠি 'সিংহ' !
সে আমার দিকে আগ্রহে তাকায় আর আমাকে শোনায় তার
          তাৎক্ষণিক উচ্চগ্রাম কবিতা
আমি সিংহ শুনতে পাবো ভেবে শুনি হাতি বাঘ জলহস্তি
          জিরাফ পিঁপড়ে গোঁয়াড়গিল
তবে ইগনাৎস উইজডম-এর স্নানঘরে সে আমায় ঠিকমতন
          ঠাহর করতে পেরেছে ।
কিন্তু পরের দিন সে আমাকে তার ধুমায়িত পাহাড়ি আস্তানা থেকে
          একটা পাতা পাঠিয়েছিল

'তোমার নরম সোনালি সিংহসুদ্দু আমি তোমায় ভালোবাসি বো-বো
কিন্তু কোনো আত্মা বা কোনো গরাদ না থাকায় তোমার 
          বাবামশায়ের চিড়িয়াখানায় সিংহ নেই
তুমি বলেছিলে তোমার মা উন্মাদ তোমার বিয়ের পাত্রের জন্য আমি
          কোনো দানব তৈরি করতে পারব না।'

বিমূঢ় হতবাক ও উদ্দীপ্ত ও আমাকে ভেবেছিল সত্যিকারের সিংহ
          হার্লেম-এর রান্নাঘরে অভুক্ত
ঘরের দরজা খুলতেই তার ক্রোধের বোমা বিস্ফোরণে ঘর ধিকিয়ে
          উঠেছিল
দেয়ালের পলেস্তারার প্রতি তার ক্ষুধার্ত গর্জন কিন্তু বাইরের কেউ
          কিছুই শুনতে পায়নি জানলা দিয়ে
আমার চোখে ধরা পড়ল কানফাটানো স্তব্ধতায় দাঁড়িয়ে থাকা
          প্রতিবেশি লাল বাসাবাড়ির আলসে

আমরা পরস্পরের দিকে তাকালুম লোমের রক্তবর্ণ জ্যোতির্মণ্ডল ঘেরা
          তার অদম্য হলুদ চাউনি
শ্লেষ্মায় নিজে থেকে গলতে লাগলুম কিন্তু সে গর্জন থামিয়ে শ্বদাঁত
          বের করে অভিবাদন জানালো
সিংহটা আমাকে খেলো না, যদিও আমার সামনে দাঁড়িয়ে তার এই
          অভুক্ত থাকা আমার ভালোলাগেনি
পরের সপ্তাহটা কাটিয়ে দিল হাড়-ভর্তি একটা অসুস্হ কম্বল নিয়ে
          যা থেকে বাদামি চুল ঝরে পড়েছে
নিজের থাবার ওপর কেশরভরা বিশাল মাথা রেখে সে ক্রুদ্ধ
          ও রক্তবর্ণ চোখে তাকায়
প্ল্যাটো ও বুদ্ধের বই-ঠাসা ডিমবাকসের বই রাখার জায়গার পাশে ।

প্রতি রাতে তার পাশে বসে তার পোকায় খাওয়া ক্ষুধার্ত চেহারা থেকে
          আমার চোখ সরিয়ে নিই
আমি খাওয়া বন্ধ করে দিতে সে দুর্বল হয়ে পড়ে আর রাত্রে আমার
          দুঃস্বপ্নের মধ্যে গর্জন করে ওঠে

সৌর বিশ্ববিদ্যালয়ের বইয়ের দোকানে সিংহটা আমাকে খেয়ে ফ্যালে
          প্রফেসর কানদিনস্কি অভুক্ত থাকায় আমি নিজেই
          সিংহ হয়ে যাই, পড়ন্ত সিংহ-সার্কাসে মরমর অবস্হায়,
ভোরবেলা উঠে দেখি সিংহটা মেঝেয় পড়ে মরছে --- 'অসহ্য
          উপস্হিতি ।' আমি চেঁচাই 'আমাকে খাও কিংবা মরো !'

সেই দুপুরে উঠে পড়লুম আমি --- দরজা পর্যন্ত হেঁটে গেলুম
          দেয়ালে তার থাবা তার কাঁপতে-থাকা শরীর সামলাবার জন্য
তার মুখের অতলান্তিক ছাদ থেকে ফাটল দিয়ে আত্মার বহিষ্কার
স্বর্গ পর্যন্ত ভারি মেকসিকোর রাতের আগ্নেয়গিরি আমারই
          বাসাবাড়ি থেকে সেই চিৎকার
ধাক্কা মেরে দরজা খুলে দিয়ে ভাঙা গলায় বললুম 'এখন
          নয় খুকি --- কিন্তু আমি শিগগিরই ফিরে আসব।'

এক দশক যাবত সিংহটা আমার মাথা খাচ্ছে তোমার ক্ষুধার 
          কথা শুনে
জানি না কী ভাবে আমাকে বেছে নেয়া হয়েছে হে সৌর গর্জন
          তোমার তৃপ্তির আশীর্বাদ তাতে ছিল না
এ-জীবনে আমি তোমার প্রতিশ্রুতি পেয়েছি আমি আমার কাজ করে গেছি
          আমি মৃত্যুর জন্য তৈরি
হা ঈশ্বর তোমার উপস্হিতি তুমি অভুক্ত থেকেছো
          তোমার কৃপাপ্রার্থনায় নিজের ঘরে অপেক্ষা করছি।

( প্যারিস, ১৯৫৮ )