Wednesday 30 May 2012

60Th pOst : হীরা বানসোডে ( মারাঠি ভাষার দলিত মহিলা কবি - জন্ম ১৯৩৯ )


হীরা বানসোডে ( মারাঠি ভাষার দলিত মহিলা কবি - জন্ম ১৯৩৯ )
যশোধরা ('বিষাক্ত রুটি' কাব্যগ্রন্হ থেকে )
ও যশোধরা !
অসহ্য ব্যথায় কাতর স্বপ্নের মতন তুমি
অশেষ দুঃখী
তোমার মুখের দিকে তাকাবার সাহস নেই আমার
বুদ্ধের প্রভায় আমরা আলোকিত হয়েছি
কিন্তু তুমি শুষে নিয়েছ অন্ধকার
এক টুকরো জীবন, জ্বলেপুড়ে ছাই ।
ও যশোধরা !
মায়াবি আকাশ তোমার কাছে আশ্রয় পায়
তোমার উজ্বল অথচ ব্যর্থ জীবনের দিকে চোখ মেলে
সহমর্মী নক্ষত্ররা কেঁদেছিল তোমার জন্য ।
আমরা মুষড়ে পড়ি
তোমার অতুলনীয় সৌন্দর্য
তোমার প্রেমিকের থেকে তুমি বিচ্ছিন্ন
গোধুলীর মতন আবছা ।
তোমার নিঃশব্দ হাহাকার শুনে
স্বর্গীয় আনন্দের প্রতিশ্রুতিকে মিথ্যা বলে মনে হয় ।
একটা কথা তুমি আমায় বলো যশোধরা, কী ভাবে তুমি
তোমার দুই ছোট্ট হাতে দুর্দম ঝড়কে সামাল দিলে ?
তোমার জীবন সম্পর্কে ভাবলেই তো জগতসংসার কেঁপে ওঠে
আর ফেনাময় সমুদ্রের ঢেউগুলোকে
তীরে নিয়ে গিয়ে আছড়ে মারে ।
তোমার হয়ত সেই মুহূর্তটি মনে আছে
যখন তোমার জীবন একটু পরেই হারিয়ে যাবে
সিদ্ধার্থের শেষ বিদায়ের চুমু
তোমার তুলতুলে ঠোঁটে ।
তুমি কি জানতে পারোনি, হে মানবী, 
যে-আগুন তোমাকে ছারখার করে দেবে তা আসন্ন
আর ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলা
ওই চুমুটির ভয়াবহ ক্ষমতা ?
বজ্রপাত ঘটে গেল আর তুমি জানতেও পারলে না
উনি এক বিশাল শৌর্যযাত্রার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন
যেখানে তুমি শুয়ে আছ তা থেকে বহুদূরে...
উনি চলে গেলেন, উনি জয় করলেন, উনি প্রভায় ভাস্বর ।
তুমি লোকমুখে শুনতে ওনার জয়গাথা
তোমার নারীত্ব নিশ্চয় কেঁদেছিল !
তুমি, যে নিজের স্বামী আর ছেলেকে হারিয়েছ
নিজেকে কি শিকড় থেকে ওপড়ানো মনে করোনি
কচি কলাগাছের মতন ?
কিন্তু ইতিহাস তোমার আত্মবলিদানের কাহিনি শোনায় না ।
সিদ্ধার্থ যদি
সমাধির ধাঁধার ভেতর দিয়ে যেতেন
তাহলে তোমার সম্পর্কে মহাকাব্য লেখা হতো !
পুরাণ আর তালপাতায় লেখা রচনায় তুমি বিখ্যাত হয়ে উঠতে
সীতা ও সাবিত্রীর মতন
ও যশোধরা !
অমন ন্যায়বিচার আমায় লজ্জা দ্যায় 
কোনো বৌদ্ধবিহারে তোমার কণামাত্র অস্তিত্ব নেই ।
তোমার কি কোনো অবদান ছিল না ?
কিন্তু, শোনো --- তুমি কষ্ট পেয়ো না ।
আমি তোমার সুন্দর মুখশ্রী দেখতে পাই ।
সিদ্ধার্থের দুই নিমীলিত চোখের মাঝখানে আছো তুমি ।
যশো, কেবল তুমিই আছো ।