Wednesday 31 October 2012

65Th pOsT : পাবলো নেরুদা’র কবিতা ‘বারকারোলা’


বারকারোলা ( সারিগান )


কেবল তুমি যদি আমার হৃদয়কে স্পর্শ করতে
কেবল তুমি যদি আমার হৃদয়ে ছোঁয়াতে তোমার ঠোঁট
তোমার তুলতুলে হাঁ-মুখ, তোমার দাঁত,
রক্তবর্ণ তীরের মতন তোমার জিভ মেলে ধরতে
যেখানে স্পন্দিত হচ্ছে আমার ভঙ্গুর হৃদয়
যদি তুমি বইতে আমার হৃদয়ে, সমুদ্রের কাছাকাছি, কান্নায়,
তাহলে তা অদ্ভূত ঝংকারে বেজে উঠত, ট্রেনচাকার, স্বপ্নে গুঞ্জন
জলের আসা-যাওয়ার মতন,
হেমন্তের পাতার মতন,
রক্তের মতন,
আকাশকে জ্বালানো স্যাঁতসেতে আগুন শিখার আওয়াজ দিয়ে,
স্বপ্নের মতন দেখা স্বপ্নে, কিংবা গাছের শাখা, বা বাতাস,
কিংবা কোনো দুঃখী বন্দরের জাহাজভেঁপু
সমুদ্রের কাছাকাছি যদি তুমি আমার হৃদয় জুড়ে বইতে
ঠিক যেমনভাবে কাঁপতে থাকে শহবেতশুভ্র প্রেত,
ফেনার লেসফিতার কানায় কানায়,
বাতাসের ফাটলগুলোয়,
সমুদ্রের ধারে শেকল-খোলা একটি প্রেত যেন কেঁদে চলেছে।
পাক খেয়ে বেরোনো অনুপস্হিতির মতন, আচমকা ঘন্টাধ্বনির মতন, হৃদয়ের নিজস্ব ধ্বনিস্পন্দনকে ভাগাভাগি করে নেয় সমুদ্র,
বৃষ্টি পড়ছে, একাকী সাগর-তীরের ঈঢ়দন্ধকার :
সন্দেহহীন রাত নেমে আসে
আর তার জাহাজডুবি নিশানগুলোর বিষণ্ণ নীল
রুপালি গ্রহমন্ডলীর তীক্ষ্ণ আয়াজে ভরে যায়।
আর হৃদয় স্পন্দিত হয় এক গ্রন্হিল খোলকের মতন,
ডাক দেয় : আহ সমুদ্র, আহ কাঁদো, আহ অবসিত ভয়,
ধ্বংসাবশেষ আর খসে-যাওয়া ঢেউতে ছড়ানো :
শব্দকে অভিযুক্ত করে সমুদ্র
তার সবুজ আফিমফুল, তার আলুলায়িত ছায়ার জন্যে।
যদি তুমি হঠাই আবির্ভূত হতে, কোনো দুঃখী সাগরতীরে,
মৃত দিনের উপাদানে পরিবৃত,
নতুন রাত্রির মুখোমুখি
ঢেউয়ে ঢেউয়ে পরিপূর্ণ,
আর তা যদি বইত আমার শীতল, ভয়ার্ত হৃদয় জুড়ে, তার নিঃসঙ্গ রক্তপ্রবাহে
উড়ন্ত পায়রার মতন তার শিখাগুলোর ওপর,
তাহলে তার কালো রক্ত শব্দাংশে ধ্বনিত হতো
ফেঁপে উঠত তার অপ্রশম্য লাল জল
আর তা ধ্বনিত হতে থাকত ছায়ায়,
মনে হতো তা যেন মৃত্যু নিজে,
কাঁদছে আর ডাকছে বাতাস-ভরা বাঁশির মতন,
কিংবা যেন তাড়নায় উচ্ছ্বসিত মুখ-খোলা বোতল।
তাহলে তা-ই, আর বিদ্যুত তোমার চুলের গোছাকে ঝিকমিকে করে তুলবে,
আর তোমার দুচোখ থেকে বেরিয়ে পড়বে বৃষ্টির দলবল
তুমি এখানে যে কান্নাকে পুষ্টি দিয়েছ তাকে গর্ভাশয় থেকে মুক্ত করার জন্যে
আর তোমায় ঘিরে পাক খাবে সমুদ্রের কালো ডানা
দাঁড়কাকের চিকার এবং শকুনের ধারালো নখরাঘাতের সাথা-সাথে।
তুমি কি সমুদ্রতীরের একাকী প্রেত হতে চাও ?
ওর ওই উদ্দেশ্যহীন, উদাসীন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে চাও ?
শুধু একবার যদি তুমি ডাক দিতে
ওর ওই টেনে-তোলা আওয়াজ, ওর দূষিত বাঁশি,
ওর চোট-খাওয়া ঢেউদের সুর,
হয়তো কেউ তাহলে আসত,
আসত কেউ না কেউ,
দ্বীপগুলোর মুকুট থেকে, লাল সমুদ্রের অতল থেকে
কেউ একজন আসবে, কেউ একজন নিশ্চই আসবে।
কেউ একজন আসবে, ভীষণ বেগে উড়িয়ে নিয়ে যাবে,
তার আওয়াজ হয়তো ভাঙা জাহাজের সাইরেনের মতন শোনাবে,
বিলাপের মতন,
ফেনা আর রক্ত থেকে উঠে-আসা হ্রেষার মতন,
নিজেকে গিলে-খাওয়া জলপ্রবাহের মতন ভয়ংকর।
সামুদ্রিক ঋতুতে
কান্নার মতন পাক খেয়ে বেড়ায় সে ছায়াগুলোই খোলোশ,
সমুদ্রপাখিরা তাকে বিশ্বাস করতে না পেরে পালায়,
তার আওয়াজের টুকরো-টাকরা, তার দুর্দশাপুঞ্জ
একলা সমুদ্রের তীর জুড়ে উঠে আসে।