অ্যালেন গিন্সবার্গ-এর ‘হাউল’
কার্ল সলোমনের জন্য
আমি
দেখেছি আমার প্রজন্মের সর্বোৎকৃষ্ট মানস বিদ্ধস্ত হয়েছে
উন্মাদনায়, খিদেতে মৃগি-আক্রান্ত উদোম
ক্রুদ্ধ
বোঝাপড়ার ধান্দায় তারা ভোরবেলার নিগরো রাস্তা দিয়ে হিঁচড়ে নিয়ে গেছে নিজেদের,
রাত্রি-কলকব্জার
তারাপ্রজ্বলনযন্ত্রের সঙ্গে প্রাচীন স্বর্গের সম্বন্ধ খুঁজতে জ্বলে উঠেছে
দেবদূতমুখো মাস্তানবৃন্দ,
যারা
ছোটোলোকমি আর ন্যাকড়াকানি আর চোখবসা আর অতিপ্রাকৃত অন্ধকারে তুরীয় ধোঁয়া টেনে
ভাসমান জলশীত বসতবাড়ি-শহরের উপরিভাগে আফরিদি সঙ্গীতের ধ্যান করেছে,
যারা
স্বর্গের কাছে মেলে ধরেছে তাদের ঘিলুমগজ আর দেখেছে বস্তির চালার ওপর জ্যোতির্ময়
ইসলামি দেবদূতদের পায়চারি,
যারা
অ্যারাক্যানসাস-এর সপ্রতিভ শীতল চোখের মায়ায় ছুটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দিয়ে আর
যুদ্ধ-পণ্ডিতদের সভায় উইলিয়াম ব্লেকের বিষাদ-আলোয় দৌড়েছে,
যারা
মাথার খুলির জানালা দিয়ে অশ্লীল গীতিকবিতা প্রকাশ ও খ্যাপামির দরুণ শিক্ষায়তন থেকে
বিতাড়িত,
যারা
কয়েকদিনের না-কামানো ঘরের অন্তর্বাসে গুটিসুটি, নোংরা
ফেলার গাদায় পুড়িয়েছে টাকা আর শুনেছে দেওয়াল ফুঁড়ে ঠিকরে-আসা সন্ত্রাস,
যারা
মারিহুয়ানার বেল্ট বেঁধে লারেডো থেকে নিউইয়র্ক ফেরার পথে ধরা পড়েছে বয়ঃসন্ধির
কেশগুচ্ছে,
যারা
রঙ-সরাইয়ের আগুন চিবিয়েছে কিংবা স্বর্গবীথিকায় চুমুক দিয়েছে রেড়ির তেলে, মৃত্যু, কিংবা নিজের ধড়কে রাতের পর
রাত অভিযোগমুক্ত করেছে স্বপ্ন দিয়ে, নেশা দিয়ে, জাগরুক দুঃস্বপ্নে, মদ আর শিশ্ন আর অন্তহীন
অন্ডকোষ দিয়ে,
ক্যানাডা
ও প্যাটারসনের খুঁটির দিকে ঝাঁপিয়ে-পড়া মেধায় অতুলনীয় কানাগলির শিহরিত মেঘ ও
বজ্রস্হির সময়-পৃথিবীকে তার মাঝে আলোকিত করেছে,
হলঘরের
শূন্যগর্ভ কাঠিন্য,
প্রাঙ্গণের গাছসবুজ কবরসকাল ছাদের
ওপরে মদখোঁয়ারি,
চোখমারা নিয়ন আলোর ট্র্যাফিক
জ্যোতিতে দোকানসঙ্ঘের রাস্তায় আনন্দটহল, ব্রুকলিনের গর্জাতে-থাকা
শীতকালীন সন্ধ্যায় থিরথিরিয়ে-ওঠা গাছপালা এবং সূর্য এবং চাঁদ, ছাই-ক্যানেসতারার আবৃত্তি আর মেধার দয়ালু আলো-মহারাজ,
যারা
বেনজেড্রিন খেয়ে য়্যাটারি থেকে পবিত্র ব্রংক্স পর্যন্ত অন্তহীন পরিভ্রমণের জন্যে
নিজেদের বেঁধে ফেলেছে সুড়ঙ্গপথে যতক্ষণ না চাকা আর শিশুর হুল্লোড়শব্দ তাদের নামিয়ে
এনেছে গ্যাঁজলাওঠা থ্যাঁৎলানো বেহুঁশ-মগজ চিড়িয়াখানার
বিষণ্ণ দীপ্তি-নেঙড়ানো আলোয়
যারা
ডুবে থেকেছে সারারাত বিকফোর্ডের সাবমেরিন-আলোয় আর ফুগাৎসির
নির্জন দোকানে কাটিয়েছে বিস্বাদ বিয়ারের সারাটা দুপুর, হাইড্রোজেন সঙ্গীত-বিস্ফোরণে কান পেতেছে সর্বনাশের
চিড়খাওয়া আওয়াজ শোনার জন্য,
যারা
লাগাতার সত্তর ঘন্টা বকবক করেছে বাগান থেকে বিছানা থেকে শুঁড়িবাড়ি থেকে বেলেভিউ
থেকে যাদুঘর থেকে ব্রুকলিন-সেতু অব্দি,
নিষ্কাম
আলাপচারীর হারিয়ে-যাওয়া এক সৈন্যদল ঝাঁপিয়ে নেমেছে চাঁদের বাইরে এমপায়ার স্টেট
বিলডিঙে জানালায় ঝুঁকে-পড়া অগ্নিতারণ রাস্তায়,
হুললোড়
চ্যাঁচামেচি বমি-করে ফিসফিস ঘটনা আর স্মৃতি আর গালাগল্প আর চোখনাচানো নেশা আর
হাসপাতালের শক-চিকিৎসা আর জেল আর যুদ্ধ,
সাতদিন
সারারাত ধরে প্রখরচোখে সমগ্র মেধাশক্তির আমূল উৎপাটন
ফুটপাতে ছুঁড়ে দেয়া ইহুদি উপাসনা-মন্দিরের মাংস,
যারা
অতলান্তিক পৌরগৃহের ধোঁয়াটে ছবির পোস্টকার্ডের ভূমিপথ এঁকে অনির্দিষ্ট জেন নিউ
জারসিতে নিরুদ্দেশ,
অন্ধকারে
সাজানো নিউআর্কের ঘরের মধ্যে নেশা ভাঙবার পরে বরদাস্ত করেছে পূবদেশের ঘাম আফরিকার
হাড়ব্যথা চিনের মস্তিষ্কপ্রদাহ,
যারা
কোথায় যেতে হবে কুলকিনারা না পেয়ে রেল-স্টেশানে ঘুরে বেড়িয়েছে মাঝরাতে, তারপর চলে গিয়েছে, ভাঙা হৃদয় ফেলে যায়নি,
যারা
দাদু-প্রাচীন রাতে জিড়িগাড়ি জুড়িগাড়ি জুড়িগাড়িতে বসে সিগারেট ধরিয়ে তুষারপাত ফুঁড়ে
এগিয়েছে নির্জন খামারবাড়ির দিকে,
যারা
পড়েছে প্ল্যাটিনাস পো সেইন্ট জন অব দ্য ক্রস টেলিপ্যাথি এবং ইহুদি গুপ্তমন্ত্র
কারণ ক্যানসাস শহরে তাদের পায়ের কাছে সহজাত ধারণায় স্পন্দিত হয়েছে মহাজগত,
যারা
অলৌকিক রেড ইন্ডিয়ান দেবদূতদের খোঁজে একা-একা টহল দিয়েছে ইডাহো শহরের অলিগলি তারা নিজেরা সত্যিই অলৌকিক
দেবদূত ছিল,
যারা
নিজেদের মনে করেছে উন্মাদ যখন অতিপ্রাকৃত উচ্ছ্বাসে আভাউজ্জ্বল হয়ে উঠেছে
বাল্টিমোর শহর,
যারা
শীত-মাঝরাত-পথ আলোব ছোটোশহর-বৃষ্টির প্রেরণায় ওকলাহোমা’র চিনামজুরের সঙ্গে আচ্ছাদিত বিলাসগাড়িতে,
যারা
গানবাজনা বা সঙ্গম বা ঝোল-তরকারির ধান্দায় হিউস্টন শ্রে ক্ষুধার্ত ও একা ঘুরে
মরেছে, আর আমেরিকা ও অনন্তের বিষয়ে আলোচনার জন্যে পিছু নিয়েছে
মেধাবী ইসপাহানিদের,
অসাধ্য কাজ, তাই জাহাজে পাড়ি দিয়েছে আফ্রিকায়,
যারা
শিকাগো বৈঠকখানায় তাত পোয়াবার আগুনে কবিতার লাভা ও ছাই ছড়িয়ে মেকসিকোর
আগ্নেয়গিরিতে উবে গেছে আর
পোশাকের ছায়া ছাড়া তারা কিছুই ফেলে যায়নি,
যারা
তারপর আবার ফিরে এসেছে চামড়ার রঙ ঝলসিয়ে ডাগর শান্তিকামী চোখে দাড়ি আর হাফপ্যান্টে
পশ্চিম উপকূলে এফ বি আই তদন্ত করে দুর্বোধ্য ফালিকাগজ বিলোতে বিলোতে,
যারা
পুঁজিবাদের মাদক তামাক-অস্পষ্টতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে নিজেদের বাহুতে
সিগারেট-আগুনের ছ্যাঁদা করেছে,
যারা
জামা-কাপড় ছেড়ে ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে ইউনিয়ান স্কোয়ারে বিলিয়েছে অতিসাম্যবাদী পুস্তিকা
যখন লস অ্যালামস সাইরেনের বিলাপ তাদের দমিয়ে দিয়েছে, বিলাপ
দমিয়েছে শেবারবাজার,
আর স্টেটেন দ্বীপের ফেরিজাহাজও
বিলাপ করেছে,
যারা
চুনকাম-জিমনাশিয়ামে অন্যের কংকালযন্ত্রের সামনে উলঙ্গ শিহরণে কাঁদতে-কাঁদতে ভেঙে
পড়েছে,
যারা
কামড়ে ধরেছে গোয়েন্দাদের ঘাড় এবং আরণ্যক সমকামের রান্নাবান্না ও নেশাভাঙ ছাড়া অনড়
কোনো অপরাধ না করার দরুন পুলিশের গাড়িতে চিৎকার
করে উঠেছঢ আনন্দে,
যারা
গলিপথে হাঁটু গেড়ে আর্তনাদ করে উঠেছে আর ছাদের ওপর হিঁচড়ে নিয়ে যাবার সময় লিঙ্গ ও
পাণ্ডুলিপির ইশারা উড়িয়েছে,
যারা
মোটরসাইকেলের সন্ত আরোহীদের পায়ুধর্ষণ করতে দিয়ে চিৎকার
করেছে উল্লাসে,
যারা
উড়িয়েছে আর যাদের উড়িয়েছে সেই মানব-দেবদূতরা নাবিকরা অতলান্তিক ও ক্যারিবিয়ান
ভালোবাসার আদর,
যারা
সকাল-সন্থ্যা অবাধে যাকে-তাকে বীর্য বিলিয়েছে গোলাপবাগানে পার্কের ঘাসের ওপরে আর
কবরখানায়,
যারা
খিলখিলিয়ে হাসতে গিয়ে অবিরাম হেঁচকি তুলেছে আর যখন শ্বেতশুভ্র ল্যাংটো দেবদূতরা
তলোয়ার বিদ্ধ করেছে তাদের তারা স্নানের ঘরের আবডালে কেঁদে ফেলেছে,
যারা
অদৃষ্টের তিন জ্বালাতনকারিনীর কাছে হারিয়েছে নিজেদের প্রেমবালকদের এক সেই বহুকামী
টাকার একচোখো মাগি এক সেই একচোখো মাগি যে গর্ভের ভেতর থেকে চোখ মারে এবং সেই
একচোখো মাগি যে নিজের পাছার ওপর বসে কিছুই করে না কেবল কারিগরের তাঁতের মেধাবী
সোনালি ধাগা ছেঁড়ে,
যারা
সঙ্গমে ভাবাবিষ্ট ও অতৃপ্ত সঙ্গে এক বোতল বিয়ার এক প্রণয়ী এক প্যাকেট সিগারেট আকটা
মোমবাতি সুদ্ধ খাট থেকে মেঝেয় পড়েছে মেঝেতে গড়াতে-গড়াতে হলঘরে দেয়াল পর্যন্ত গিয়ে
মূর্চ্ছা গিয়েছে পরম-যোনির কল্পনায় এবং ফিরে এসেছে চেতনার শেষ স্তরে,
যারা
গোধুলির কম্পমান হাজার নারীর চাউনিকে সুধা-মোহিনী করেছে আর ভোরবেলায় লাল চোখ নিয়ে
জাগা সত্বেও সূর্যোদয়ের চাউনিকে সুধামোহন করার জন্য তৈরি হয়ে গোলবাড়ির দাওয়ায়
দেখিয়েছে পাছার ঝলক আর ঝিলঝিলে উদোম,
যারা
অজস্র চুরি-করা রাতমোটরে কোলোরাডো শহর ছাড়িয়ে বেলেল্লাপনা করতে বেরিয়েছে, এন সি, এই কবিতার গোপন নায়ক, ডেনভার-এর অ্যাডোনিস ও শিশ্নমানব—- খাবার ঘরের ফাঁকা জায়গায় অসংখ্য মেয়ের সঙ্গে সঙ্গমের
স্মৃতি-আনন্দ, সিনেমাঘরের পেঁচোয়-পাওয়া সারিতে, পাহাড়চুড়ায় গুহায় কিংবা চেনাজানা রাস্তায় ফাঁকা শায়াগোটানো
শিড়িংগে চাকরানির সঙ্গে আর বিশেষ করে আত্নজ্ঞানবাদী পাকা খেলুড়েদের গোপন
পেটরল-পাম্প, এমনকি শহরের অলিগলিতে,
যারা
বিশাল নোংরা সিনেমায় অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে, স্বপ্নের মধ্যে তুলে নিয়ে
গিয়েছে তাদের, জেগে উঠেছে আচমকা ম্যানহাটনে, হৃদয়হীন টোকে-র মাটির তলার ঘরে সামলেছে নিজেদের আর থার্ড
অ্যাভেনিউ-এর ধাবমান স্বপ্নের আতঙ্ক এবং শেষকালে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে চাকরি-খোঁজার
দফতরে,
যারা
সারারাত তুষারমাখা জাহাজঘাটায় রক্তভর্তি জুতো পরে এই আশায় হেঁটেছে যে একদিন আফিম
আর তাপবাষ্পে ঠাসা ঘর দরজা খুলে দেখবে একটি নদী,
যারা
চাঁদের যুদ্ধকালীন নীলাভ আলোকবন্যায় হাডসন বাসাবাড়ির কানায় মহান আত্মঘাতী নাটক
করেছে আর নশ্বরতায় তাদের পরানো হবে জলপাইপাতার শিরোমুকুট,
যারা
খেয়েছে কল্পনার ভেড়ার মাংস কিংবা বাওয়ারির ঘোলাটে নদীতলের কাঁকড়া হজম করেছে,
যারা
তাদের ঠেলাগাড়ির পেঁয়াজ আর ফালতি সঙ্গীত নিয়ে রাস্তার রোমান্সে কেঁদে ফেলেছে,
যারা
সেতুর তলায় অন্ধকারে তাদের বাক্যের ওপর বসে নিশ্বাস ফেলেছে, আর চিলেকোঠার আস্তানায় জেগে উঠেছে তারের বাদ্যযন্ত্র বেঁধে
ফেলতে,
যারা
ব্রহ্মবিদ্যার কমলালেবু-ভরা যক্ষ্মা-আক্রান্ত আকাশের তলায় আগুনের মুকুট পরে
হার্লেমপাড়ার ছয় তলায় বসে কেশেছে,
যারা
সারারাত মহিমান্বিত জাদু মন্ত্রোচ্চারণের জন্যে পাশ ফিরে উপুড় হয়ে আঁকিবুকি কেটেছে
যা হলুদ ভোরবেলায় হয়ে উঠেছে মানেহীন বুকনির স্তবক,
যারা
বিশুদ্ধ উদ্ভিদ সাম্রাজ্যের স্বপ্নে রান্না করেছে পচা জন্তু-জানোয়ারের ফুসফুস হৃদয়
ঠ্যাঙ লেজ অন্ড বৃক্ক,
যারা
মাংস-বোঝাই লরির তলায় ডিম খুঁজতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে,
যারা
সময়ের বাইরে অনন্তকে ভোট দেবার জন্যে ছাদের আলসে থেকে হাতঘড়ি ছুঁড়ে ফেলেছে, তারপর দশ বছর ধরে প্রতিদিন তাদের মাথার ওপর পড়েছে
টেবিল-ঘড়ির শব্দ,
যারা
পরপর তিনবার নিজের কব্জি কাটতে অসফল হয়েছে, ছেড়ে দিয়ে বাধ্য হয়েছে
পুরানো মালপত্তরের দোকান খুলতে তারা ভেবেছে তারা বুড়িয়ে যাচ্ছে আর কেঁদেছে,
যারা
তাদের নিরীহ ফ্ল্যানেল-পোশাকে জ্যান্ত পুড়ে মরেছে ম্যাডিসন অ্যাভিনিউ-এর
সিসকনির্মিত পদ্য-বিস্ফোরণের মাঝে এবং ফ্যাশনের লৌহসেনানীর যুদ্ধ-কিড়মিড়ে এবং
বিজ্ঞাপনপরিদের হুংকারের নাইট্রোগ্লিসারিনে এবং ক্ষতিকর বুদ্ধিমান সম্পাদকদের
বিষবায়ুতে, কিংবা পিষে গেছে চরম সত্যের মাতাল ট্যাকসিগাড়ির তলায়,
যারা
ঝাঁপিয়ে পড়েছে ব্রুকলিন ব্রিজ থেকে এসবই সত্যি আর কোথায় বিস্মৃত হারিয়ে গেছে
চিনাপাড়ার অলিগলি আগুনবাড়ির ভুতুড়ে ধোঁয়ায় এমনকি এক গেলাস মাগনা বিয়ারও পায়নি,
যারা
বিষাদের জানালা খুলে গেয়ে উঠেছে, ভূগর্ভ জানালার বাইরে গিয়ে
থুবড়ে পড়েছে, লাফিয়েছে নোংরায়, ঝাঁপিয়েছে নিগরোদের ওপর, সারা রাস্তা কেঁদেছে, খালি পায়ে নেচেছে ভাঙা মদের
গেলাসের ওপর মনকেমন-করা ইউরোপের ১৯৩০ জার্মান সঙ্গীতের গ্রামোফোন রেকর্ড চুরমার
হুইসকি শেষ করে রক্তাক্ত পায়খানায় কাতরেছে, কর্নকুহরে চাপা গোঙানি
শুনেছে আর দৈত্যাকার বাষ্পরাশির গর্জন,
যারা
একে অন্যের আঘাতশাস্তি জেলপএকাকীত্বে পিপাবন্দী হয়ে যাত্রা করেছে অতীতের রাজপথে
কিংবা বার্মিংহাম বাজনার পুনর্জন্মে,
যারা
অমরত্ব জানবার জন্যে আমার ভাবাবেশ ঘটছে কি না কিংবা তোমার ভাবাবেশ ঘটছে কি না
কিংবা কারোর ভাবাবেশ ঘটছে কি না তার খোঁজে বাহাত্তর ঘন্টা মাঠবাদাড় চষে বেড়িয়েছে,
যারা
ডেনভার অব্দি পাড়ি দিয়েছে, মরেছে ডেনভার-এ, ডেনভার-এ ফিরে এসে ব্যর্থ অপেক্ষা করেছে, দেখেছে ডেনভার আর ভেবেছে আর একলা ঘুরে বেড়িয়েছে ডেনভার-এ
এবং শেষ পর্যন্ত সময়কে খুঁজতে বেরিয়ে পড়েছে আর এখন ডেনভার তার নায়কদের অভাবে ফাঁকা,
যারা
ব্যর্থ গির্জাঘরে হাঁটু পেতে পরস্পরের মুক্তি আর আলো আর হৃদয়ের জন্যে প্রার্থনা
করেছে, যতক্ষণ না ক্ষণকালের জন্যেও অন্তত আত্মার চুলের গোছা
আলোকিত হয়ে উঠছে,
যারা
সোনালি মাথার অসম্ভব অপরাধীদের জন্যে মগজ চিরে অপেক্ষা করেছে জেলখানায় আর তাদের
হৃদয়ে বাস্তবতার সৌন্দর্য আলকাত্রাজ-এর লোকগান শোনায়,
যারা
একটা অভ্যাস গড়ে তুলতে মেক্সিকোয় অবসর নিয়েছে, কিংবা
বুদ্ধকে ভক্তি জানাতে রকি মাউন্টেন-এ কিংবা ট্যানজিয়ার্স-এ বালকদের জন্যে কিংবা
সাদার্ন প্যাসিফিক-এ কালো রেলগাড়ির জন্যে কিংবা হারভার্ড থেকে নারসিসাস থেকে উডলন
থেকে ঘাসফুল-শৃঙ্খলায় কিংবা কবরে,
যারা
বেতারযন্ত্রকে জাদুসন্মোহনে অভিযুক্ত করে প্রকৃতিস্হ বিচারের দাবি জানিয়েছিল তারপর
পড়ে রইলো তাদের নিজেদেরই পাগলামি এবং দুই বাহুর ভেতরে একদল অনিশ্চিত জুরি,
যারা
নিউইয়র্ক কলেজে ডাডাইজমের ক্লাসে আলুর স্যালাড ছুঁড়েছে তারপর ন্যাড়ামাথায়
আত্ম্ত্যার নাটুকে বক্তৃতা দিয়ে দাঁড়িয়েছে গিয়ে পাগলাগারদের গ্র্যানিট সিঁড়িতে
দাবি জানিয়েছে তাৎক্ষণিক লবোটমির,
আর
তার বদলে তারা পেয়েছে ইনসুলিন মেটরাসল ইলেকট্রিসিটি হাইড্রোথেরাপি সাইকোথেরাপি
পিংপং স্মৃতিবিলোপের পাষাণ-শুন্যতা,
যারা
কৌতুকহীন প্রতিবাদে একটাই পিংপং প্রতীক টেবিল উল্টে দিয়ে এখন ক্যাটালোনিয়ায়
সংক্ষিপ্ত বিশ্রাম নিচ্ছে,
কেবল
রক্তশিরার পরচুলা ছাড়া সত্যিকারের টেকো হয়ে ফিরেছে বহুবছর পর, আর চোখের জল হাতের আঙুল পুবের উন্মাদ শহরগুলির দৃশ্যমান
উন্মত্ত ধ্বংসের কাছে ফিরেছে তারা,
বিভিন্ন
দুরপাল্লার বাসকোম্পানির ভ্রূণঘরে আত্মার প্রতিধ্বনির সঙ্গে খুনসুটি, মাঝরাতের একাকী বসার জায়গায় প্রেমের পাটুরে আসরে দোল-খাওয়া
নড়াচড়া, জীবনচিন্তা শুধু দুঃস্বপ্ন, পরিদের
পাষাণে পরিবর্তিত যেন চাঁদের সমান ভারি,
তারপর
মায়ের সঙ্গে, বাসাবাড়ির জানালা দিয়ে শেষ খেয়াল-সর্বস্ব বইটা ছুঁড়ে ফেলা, আর সকাল চারটেয় শেষ দরজা বন্ধ আর শেষ টেলিফোন উত্তর দেবার
বদলে দেয়ালে ঝোলানো আর শেষ গোছানো ঘর থেকে তাবৎ
মানসিক আসবাব সরিয়ে ফেলা, আলমারির তারে ঝুলছে কাগজের মোচড়ানো গোলাপ আর সেই
কল্পনাটুকু, একটুকরো আশায় ছোট্ট বিভ্রম ছাড়া কিছুই নয়—-
হায়, কার্ল, তুমি যদি বিপন্মুক্ত না হও
আমিও বিপন্মুক্ত নই,
আর এখন তুমি সত্যিই সময়ের সামগ্রিক
জান্তব ঝোলঝালে—-
আর
কে তাহলে ঠান্ডা হিম রাস্তার মাঝ-বরাবর দৌড়েছে অপরসায়নের আকস্মিক ঝলকে বৈসাদৃশ্যের
ব্যবহারে তালিকায় মাপজিক আর স্পন্দ্যমান রেঁদায় আবিষ্ট হয়ে,
যারা
পরস্পরবিরোধী বাকপ্রতিমার মাধ্যমে সময় কাল ও স্হানের গঠন করেছে ও স্বপ্মে দেখিয়েছে
মূর্তিমান হাঁ-মুখ,
আর দুই দৃশ্যমান কল্পনার মাঝে
আত্মার শ্রেষ্ঠ দেবদূতদের ধরে ফেলেছে আর জুড়েছে নিদানিক ক্রিয়াপদ আর পাতের
ওমনিপোটেনাস এটারনা ডিউস-এর চেতনার সঙ্গে লাফাতে থাকা বিশেষ্য ও সমান্তরাল
যতিচিহ্ণের সংবেদনকে মিলিয়েছে,
শব্দবিন্যাসকে
পুনর্গঠিত করার জন্যে এবং দরিদ্র মানবিক গদ্যের পরিমাপ তোমার সামনে বাকরুদ্ধ ও
বুদ্ধিমান ও লজ্জায় অধোমাথা, উদোম ও অন্তহীন মগজে
চিন্তার ছন্দমাত্রার সঙ্গে তাল রাখতে পরিত্যক্ত হবার পরেও আত্মাকে কবুল করেছে,
সময়ের
অমোঘ উন্মাদ পেয়াদা ও দেবদূতের ঝাপট, অজানা, তবু মরে যাবার পর সময়ের কাছে ছেড়ে যাওয়া কথাবার্তা এখন
রেখে যেতে হবে,
আর
তারপর নবঅবতার হয়ে এসেছে ঐকতানের স্বর্ণশিঙা ছায়ায় আফরিদি সঙ্গীতের ভুতুড়ে পোশাকে
আর এলি এলি লামা লামা সাবাকতানি স্যাকসোফোন-কান্নায় শেঢ় রেডিও অব্দি শহরগুলোকে
কাঁপিয়েছে, তাতে প্রেমের জন্যে আমেরিকার উলঙ্গ মানসে দুঃখবিস্ফোরণ
ঘটেছে,
হাজার
বছর ধরে খেতে ভালো লাগবে এরকম তাদের শরীর থেকে কেটে বের করে আনা জীবনকবিতার পরম হৃৎপিণ্ড।
(১৯৬৪ সালে অনুদিত ও হাংরি বুলেটিনে ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত। গ্রন্থাকারে
১৯৯৬ সালে প্রথম প্রকাশিত)