মহিলা সুফি কবি
রাবিয়া আল-আদাবিয়া ( ৭১৭-৮০১ )
[ জন্ম বসরা শহরে । অতিকথা অনুযায়ী
কম বয়সে যখন তিনি পরিবারের সঙ্গে মরুভূমির পথে যাত্রা করেছিলেন, ডাকাতের দল তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে
বাঁদি হিসাবে বিক্রি করে দিয়াছিল । অপর একটি কাহিনি অনুযায়ী, তাঁর বাবা তাঁকে একজন আমিরের কাছে
বিক্রি করে দিয়েছিলেন । ক্রীতদাসী থাকা কালেই কবিতা লেখা শুরু করেন । যৌবন ফুরিয়ে
যাবার দরুণ অব্যবহার্য হয়ে গেলে বাঁদীত্ব থেকে মুক্তি পান
। তাঁর এই
প্রেমের কবিতাগুলো হয়তো তাঁর কোনো প্রেমিকের জন্য রচিত ; অথবা ঈশ্বরের বন্দনায় ।
পরবর্তীকালে তাঁকে সুফি কবি হিসাবে চিহ্ণিত করা হয়েছে এবং দাবি করা হয়েছে যে তাঁর
কবিতাগুলো ঈশ্বরের প্রতি নিবেদিত । বর্তমান কালখণ্ডে আরব ভূখণ্ডের ধার্মিক
বাতাবরণে সুফি কবিতা নিষিদ্ধ হয়ে চলেছে ; বিভিন্ন দেশে সুফি কবিদের
স্মৃতিচিহ্ণগুলো ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে ]
১.
হৃদয়
ও হৃদয়ের মাঝে অন্য কিছু নেই
যে-কথা
ভাষায় আনি তা শুধু তোমার
সত্যের
স্বাদের বর্ণনা
যার
জিভ আছে সেই শুধু জানে
যে
তাকে ব্যাখ্যায় আনে মিথ্যার বেসাতি করে
কী
ভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে যার কোনো আঙ্গিক নেই !
সামনে
দাঁড়ালে যার মুখ ফুটে বলতে পার না তুমি ?
যে
তোমাকে নিজের অস্তিত্ব দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে
তোমার
যাত্রার পথে দিকচিহ্ণ হয়ে ?
২.
তোমাকে
ভালোবাসবার শুধু দুটি পন্হা আছে
একটি
ভয়ানক আত্মপর
অন্যটি
তোমাতে উজাড় ;
আত্মপরতায়
আমি কেবল কেবলই তোমাকে পেতে চাই
অপর
পন্হায় তুমি আমার ঘোমটা তুলে ধরো
আমাকে
অধিকার দাও তোমার মুখের দিকে দুই চোখ মেলি
৩.
আমার
দুঃখ ও একাকীত্বের উৎস আছে আমারই ভেতরে
এ-অসুখ
সারাবার ঔষধ নেই
আমার
বন্ধুর সঙ্গে মিলনই সারাতে পারবে এ-অসুখ
৪.
তোমাকে
করেছি তুলে আমার হৃদয়সঙ্গী
কিন্তু
দেহ দিতে হয় সেই লোকেদের যারা সঙ্গ চায়
দেহ
তো বন্ধু হয়ে সাড়া দেয় যে নিচ্ছে তাকে—
কিন্তু
প্রেমিক তুমি চিরকাল আত্মার অতিথি আমার
৫.
আমি
দরজা-প্রহরিণী একজন, তাই
যা
আছে আমার অন্তরে তাকে বাহির করি না
যে
আছে বাইরে তার প্রবেশের অনুমতি নেই
কেউ
যদি ভেতরে ঢুকে আসে তখনই চলে যেতে হবে
আমার
সঙ্গে সেই লোকটির সম্পর্ক গড়ে উঠবে না
হৃদয়ের
দরজা-প্রহরিণী আমি
কাদার
তালের মতো নই ।